আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০০ অপরাহ্
নিজেস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার ফ্যান্টাসি কিংডম লাগোয়া এলাকায় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আবেদন পত্রে উল্লেখিত সম্পত্তির বদলে ভুল চৌহদ্দির সম্পত্তি দখল করে নিলাম গ্রহীতাকে বুঝিয়ে দেবার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে এই কাজে একজন ম্যাজিস্ট্রেট এর তত্ত্বাবধানে আশুলিয়া পুলিশের উপস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
অর্থঋণ আদালত – ৪ এর বর্ণিত সম্পত্তির তফসিল এ বর্ণিত মোট তিন দাগে উল্লেখ করা ৫.৭৩ শতাংশ জায়গার মধ্যে সর্বমোট ৯১ শতাংশ সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এর প্রিন্সিপাল শাখায় দ্বায়বদ্ধ করেন। মেসার্স এস বি ট্রেডার্স এর স্বত্তাধিকারী সন্তোষ চন্দ্র সরকার মোট ২০,০০,০০০/- বিশ লক্ষ টাকা ২০০৬ সালে ঋণ গ্রহন করে নিরুদ্দেশ হয়। এই নিরুদ্দেশের আগে বা পরে কখনই কোন প্রতিষ্ঠান থেকে বা কোন সংস্থা থেকে কোনপ্রকার পত্র দিতে আসাতে কাউকে নিলামে উল্লেখিত ঠিকানায় সাং – বেরন,জিরাবো, ডিইপিজেড রোড সাভার, ঢাকার ঠিকানায় আসতে দেখা যায়নি।
পরবর্তীতে ২০১২ সালে দায়ের কৃত মামলায় ২০১৩ সালে নিলামের আদেশ হয়। সেই রায়ে ধার্য্যকৃত মূল্যে নিলাম খরিদ করেন শফিকুর রহমান চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। যিনি নিলাম খরিদের প্রায় সাত বছর পর তা দখলে নিতে আসেন। কেন তিনি এত দেরীতে দখলে এলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তার ভাই হাবিবুর রহমান চৌধুরী জানান, তারা আদালত থেকে নিলাম খরিদের পর দখলের জন্য ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ফোর্স চাইলেও তা পেতে নাকি সময় লেগেছে ৭ বছর।
অন্যদিকে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার এর কাছে পুলিশ চেয়ে ৭ বছর না পাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি সংশ্লিষ্ট থানার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আমাদের প্রতিনিধি আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা( ওসি) এর সাথে যোগাযোগ করলে তার কথায় বেশ আগাম উদ্দেশ্যেপূর্ণ অবস্থানের সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি বিষয়টি না শুনেই, দেখান আদালতের ভয়। তিনি বলেন, রায় নিয়ে কথা বলা যাবে না। আমাদের প্রতিনিধি জানতে চান,এখানে আদালতের রায় নিয়ে তো কিছু বলা হচ্ছে না। উক্ত সম্পত্তি দখল করতে সাত বছর কেন পুলিশ দেওয়া হয়নি। এমন প্রশ্নে, ওসি পুনঃরায় আদালতের দোহাই দেন। তবে
চৌহদ্দি / আদালতের আদেশে দখল এর আগে এবং পরে সংশ্লিষ্ট নিলাম গ্রহীতার কর্মকাণ্ডে দাড়িয়েছে নানান প্রশ্ন ।
জানা যায় এসবি ট্রেডার্স এর ব্যানারে২০১৩ সালের এই নিলাম আহব্বানের পূর্বে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক হ’তে ঋণ নেয়া হয় । কিন্তু এই সম্পত্তির আর একবার লোন নেওয়া হয়েছে পূবালী ব্যাংক মালিবাগ শাখা থেকে। একই সম্পত্তির দুইটি পৃথক ব্যাংকের ঋণ দেওয়া এবং নেওয়ায় দাড়িয়েছে নানান প্রশ্ন। সাধারনত ব্যাংক লোনের আগে বন্ধকদাতার সম্পত্তি সরেজমিনে প্রদর্শন পূর্বক চৌহদ্দিসহ জায়গার মূল্য নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিতে হয়। সেই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তথা সোশ্যাল ইসলামী ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক সরেজমিনে প্রদর্শন হয় এমন দৃশ্যমান কোন কর্মকাণ্ড উক্ত সম্পত্তিতে করেননি। যা স্থানীয়দের কারো দৃষ্টিগোচরেও আসেনি। বর্তমানে আদালতের রায়ের কারণে দখল চূত্য হওয়া সম্পত্তির মালিক নিলুফার নিগার ও মাহফুজা শরীফ, পৈতৃক সূত্রে জমির মালিক ও দখলদার সন্তোষ চন্দ্র সরকার, পিতা- বিনোদ চন্দ্র সরকার নিয়োজিত হয়ে তাদের বায়া মোঃ লুতফর করিম, হাবিবুর রহমান, মিসেস ফিরিদা করিম,জোহরা বেগম ও সিদ্দিকুর রহমানের কাছ থেকে গত ০৭/০১/১৯৮৮ ইং তারিখে সন্তোষ চন্দ্র সরকার থেকে সাব কবলা ও দখল বুঝে নেয় এবং যা বায়াদের কাছ থেকে ৫ টি দলিল মূলে ১.০৩ একর জমি নিলুফার নিগার ও মাহফুজা শরীফ ক্রয় করেন যার
চৌহদ্দি –
উত্তরে জেলা পরিষদের রাস্তা,দক্ষিনে মীর হামিদুল্লা ও জাহাঙ্গীর গং। বর্তমানে ফ্যান্টাসি কিংডম পার্ক। পশ্চিমে মন্তোষ গং যা বর্তমানে ফ্যান্টাসি কিংডম এর স্থাপনা ও বিভিন্ন রাইডস।পশ্চিমে গৌরাঙ্গ, বর্তমানে SIDKO.
তার পর থেকে খাজনা – খারিজ হয় মাহফুজা শরীফের নামেই। তিনি এই সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নেন পূবালী ব্যাংক মালিবাগ শাখা থেকে। এখন একই সম্পত্তিতে সন্তোষ চন্দ্র সরকার ঋণ নেন ২০০৬ সালে। এই ঘটনায় ব্যাংকগুলোর দায়হীন উদাসীন কার্যক্রম ফুটে উঠেছে বলেই মনে করেন বিজ্ঞজনেরা।
এদিকে দেখা যায়, উক্ত নিলামকৃত সম্পত্তির চৌহদ্দির একটি বিবরন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার কর্তৃক প্রদত্ত আদালতে প্রেরিত একটি আবেদন পত্রে পুলিশ সুপার এর বক্তব্যে দেখা যায় যে, ” উক্ত সম্পত্তিতে বর্তমানে ফ্যান্টাসি কিংডম পার্কের ওয়াটার কিংডমের স্থাপনা ও বিভিন্ন রাইড রয়েছে। সাথে একটি মালামালের টিনশেড গোডাউন, চারিদিকে বিশাল আকারের বেষ্টনী দেয়াল ও দর্শনার্থীদের প্রবেশের গেইট রয়েছে। ” এই বর্ণনা মোতাবেক যেই সম্পত্তি দখলে গেছে তাতে মোট সম্পত্তি দাঁড়ায় প্রায় ৪/৫ একর। মাত্র ৯৭ শতাংশ জায়গার বিপরীতে এত পরিমান চৌহদ্দি দেখানো কতটা যুক্তি সংগত। সাথে ফেন্টাসী কিংডমের জায়গায় মধ্যে যেই চৌহদ্দি বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে কেন সেখানে দখল স্বত্ত্ব নিলাম ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি তার প্রশ্ন দাড়িয়েছে।
অন্যদিকে নিলাম কিনে নিলাম খরিদ করা শফিকুর রহমান চৌধুরী নিয়েছেন নানান কৌশলের আশ্রয়। তিনি আক্তারুজ্জামান নামের একজন দালালকে দিয়ে দখলের তিনদিন আগে ভুল মেসেজ দিয়েছেন ইমো’তে উক্ত সম্পত্তির দখলে থাকা মালিককে। যাতে সন্তোষ চন্দ্র সরকার এর এসবি ট্রেডার্স এর ঋণ গ্রহনের ব্যাংক উল্লেখ করা হয়েছে আল আরাফা ইসলামি ব্যাংক। ফলে দখলে থাকা মালিক আল আরাফা ব্যাংকে এই ঋণের ব্যপারে কোন নথী পাননি।
মহামান্য আদালতের একটি রায়ের আগে এবং পরের যুক্ত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে নানান প্রশ্ন দাড়িয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
এদিকে বিষয়টি এলাকায় আতংক এবং চাঞ্জল্য সৃষ্টি করেছে বলে জানা গেছে।