আজ বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২, ০৫:৫৮ অপরাহ্
ডেস্ক নিউজ –
শীতকাল আসতে না আসতেই বায়ুদূষণে প্রায় দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে রাজধানী ঢাকা। দূষণকবলিত অন্যান্য দেশের তুলনায় এই মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। শনিবার বায়ুদূষণে ঢাকা বিশ্বে আবারও এক নম্বরে উঠে আসার পর প্রতিদিন ওঠানামা করছে। এতদিন পর্যন্ত ভারতের রাজধানী দিল্লি ছিল বায়ুদূষণে শীর্ষে। সেই দিল্লির চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দূষিত এখন ঢাকা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাইবিষয়ক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী সোমবার দিল্লির বায়ুদূষণের মানমাত্রা ছিল ১১২, মুম্বাইয়ের ১৬৯ এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা কলকাতার মানমাত্রা ছিল ১৮৬। আর ঢাকার বায়ুমান ছিল ৩১৫, যা দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণের মাত্রা ২০০ ছাড়ালে তাকে মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। শীতের শুষ্ক মৌসুমের কারণে আগামী তিন মাস এ ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করবে। বায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যদি এখনই বায়ুদূষণ রোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছয় ধরনের পদার্থ ও গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা, অর্থাত্ পিএম ২ দশমিক ৫-এর কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলেই পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আব্দুস শাকুর খান বলেন, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বলছে, বায়ুদূষণযুক্ত ঢাকা শহরে বসবাস করছি আমরা।
যারা সুস্থ ফুসফুস নিয়ে কোনো রোগবিহীনভাবে এই শহরের বায়ু গ্রহণ করছি, তাদের ফুসফুসও কিন্তু আক্রান্ত হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে নানা অসুখের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরাও এ থেকে বাদ যাচ্ছে না। ডা. মো. আব্দুস শাকুর খান বলেন, ‘এয়ার কোয়ালিটিটা তো দুই দিনে ভালো করতে পারব না। আইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে কিন্তু হবে না। আইনের একটা সঠিক প্রয়োগ দরকার।’
বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বায়ুদূষণ হঠাত্ করে বেড়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে করোনার প্রভাব কাটিয়ে যানবাহনের চলাচল বেড়েছে, বাংলাদেশের আশপাশের অঞ্চল থেকে দূষিত বাতাস আসছে ঢাকার দিকে। সাধারণত শীতকালে উত্তরের বাতাস আসা শুরু হয়। তার সঙ্গে আসছে দূষিত কণাও। ঢাকায় খোঁড়াখুঁড়ির পরিমাণ বেড়েছে। নির্মাণকাজের কারণে ধূলিকণা বাড়ছে এবং চলতি মাসে ইটভাটাগুলো চালু হওয়ার কারণেই মূলত এই দূষণ আরো বেড়ে গেছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) তথ্য অনুসারে, রাজধানীর বায়ুদূষণের ৫০ শতাংশ হয় ইটভাটা থেকে, ৩০ শতাংশ হয় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সিটি করপোরেশনের বর্জ্য থেকে। ১০ শতাংশ দূষণ হয় গাড়ির জ্বালানি থেকে। শিল্পকারখানার বর্জ্য থেকে ১০ শতাংশ। এই দূষণ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধের পাশাপাশি রাস্তাগুলোতে প্রতিদিন পানি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘দূষণের ৫০ শতাংশের জন্য দায়ী কনস্ট্রাকশন রিলেটেড প্রজেক্টগুলো। আমি যদি স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ দিয়ে শুরু করি, তাহলে আজকের এই মুহূর্ত থেকেই ঢাকার রাস্তায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি থেকে বায়ুদূষণ ঢাকায় প্রতিযোগিতামূলকভাবে বাড়তে শুরু করে। এই প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর অন্যান্য শহরকে পিছিয়ে ফেলে ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকার প্রথমে চলে আসে। বায়ুদূষণের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক অনেক পুরোনো। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে শহরের বাতাসে মানের উন্নতি হয়।
তবে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বাতাস মানের দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করেছে। তখন বায়ুতে বিপজ্জনক সূক্ষ্ম ধুলা ও বস্তুকণা পিএম ২ দশমিক ৫-এর জন্য বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। আর বিশ্ব বায়ু মান প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে ঢাকা দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহর হিসেবে গণ্য হয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয় এবং বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে।