আজ রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন
রাফেল অনুষ –
ছবি – ছিটমহল
কাহিনি, সংলাপ, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা – এইচ আর হাবিব
দৈঘ্য – ২ ঘন্টা।
ধরন – সোস্যাল ক্লাইমেক্স।
চরিত্র – ঠাং পাগলা – আরমান পারভেজ মুরাদ।
রেণুবালা – পিয়া জান্নাতুল ।
পৃথীবালা – মৌসুমি হামিদ ।
নরেন – শিমুল খান।
চটকা – আনোয়ারুল আলম সজল
মুঘোল সরকার – ডন হক ।
টিটো ষন্ডা – এইচ আর হাবিব ।
ও
অন্যান্য
ছিটমহল বাংলাদেশ ভারতের একটি অমিমাংসিত অধ্যয় হলেও এখন মিমাংশিত।
পর্দায় দেখা যায় নরেন নামের চরিত্র ছিটমহল এর আইডল। ফুটবল খেলায় সে সন্মানিত। ফলে ছিটের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে। ৬৮ বছরের অবজ্ঞা বঞ্চনার ইতিহাস এই ছিটমহল। দুই দেশের সরকারের মধ্যে বিনিময় ঘোষণার পর থেকে বিনিময় শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গল্পের পটভূমি ।
গল্প এগিয়ে নিতে নরেন এর যাত্রা শুরু হলেও চরিত্রটির ভূমির প্রতি ভালবাসা থাকলেও মেরুদণ্ড সোজা করে দাড়াতে দেখা যায় না। বরং ঠিক কিছু সময় পরই হঠাৎ জ্বলে উঠে ঠাং পাগলা নামের একটি চরিত্র। আহা কি ভীষণ কমিটমেন্ট তার, ভূমির অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত সে মাটি স্পর্শ করবে না। তাই সে রণপা’য় চড়ে ঘুরে বেড়ায় সুযোগের অপেক্ষায়। সুযোগ পেলেই সে এক ঘা মেরে দেবে। দর্শক ছোটে তার পিছনে কখন ঘা মারে সে।
এই চলতে চলতেই আগমন ঘটে একটি চরিত্রের সে রেণুবালা। ভাই নরেন এবং বৌদি পৃথীবালার দেশ ত্যাগ এবং ত্যাগ না করা নিয়ে যখন পারিবারিক দন্ধ শুরু হয়, তখন রেণুবালা ভূমি ত্যাগ না করার আহব্বান জানায়। তা যেন ঠাং পাগলার বক্তব্যের সাথে মিলে যায়। ফলে দুইজনের ভেতরে ভাললাগার অনুভব দর্শকের সামনে আসে। দুইজনের মনবলের কারণেই সাহস পায় ছিটমহলের মানুষগুলো।
ছিটমহল এর মুঘল সরকার নামে নিজেস্ব সরকারের ইচ্ছায় নিজেকে সপে দিতে বাধ্য হয় রেণুবালা নিজেকে ছিটমহল এর কর্তার ভোগ হতে।
নরেনের মেয়ে ফিরোজ নামের এক ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে দোষা হয় নরেনের মেয়ের প্রেমিক চটকাকা কে।
শুরু হয় তান্ডব। নরেনের ভূমির মায়া হালকা হয়। সে রাতে পরিবার সহ নিরুদ্ধেশে ছোটে সীমান্তের ঐ পারে। পথিমধ্যে ফুটবল খেলার মানপত্র হারিয়ে গেলে স্মৃতিকে বহন করে নিতে ছোটে সে। মানপত্র পেয়ে যখন সীমান্ত মূখী হবে তখন তার পোষা গরুটির স্মৃতি ভেষে উঠে সামনে সে ফেরে। সৃষ্টি হয় এক উত্তপ্ত পরিস্থিতির। ফলে সংঘাত আসে অবধারিত হয়ে সামনে। আবার নেতৃত্ত্ব দেয় ঠাং পাগলা। অপশক্তি হয় নির্মূল হারায় একটি জীবনে। সেই ছুটে যাওয়া জীবনই আলোর উৎসে মেলে ধরে।
মূলত গল্পের সারা বক্তব্য। দেশ পরিচয় এর আগে ভূমির পরিচয়। ফলে ত্যাগ নয় আকড়ে থাকার মধ্যদিয়ে মায়ের সাথে সন্তানের সম্পকর্কে উর্ধে তুলে ধরা হয়েছে।
জন্মভূমি জননী। মাকে কি ভোলা যায়। মা ছাড়া চেংরা পোলাপাইনের অত্যাচার কে সহ্য করবে।
আর এই বুঝেই ঠাংপাগলা হয়ে উঠে গল্পের নায়ক। সাথে বিদ্রোহী হয়ে রেণুবালা, সেই হয়ে উঠে গল্পের নায়িকা।
এক কথায় বেশ থ্রিয়েটিকাল স্টোরি টেলিং। টুইস্ট এবং টার্ন শেষ পর্যন্ত গল্প না দেখে দর্শকের উঠে যাবার কোন সুযোগ নেই। প্রথম ৫ মিনিট গল্প গুছিয়ে এক টানে ছুটে যায় নানান উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে। গল্পকার এবং পরিচালকের মুন্সিয়ানা মূলত এই ধরনের গল্পে কোন চরিত্রের একক নির্ভরতায় বিশ্বাসী হননি। খুব অভিজ্ঞ না হলে এমন গল্প বুনন কঠিন।
এক কথায় একটি একঘেয়েমির বেয়রের গল্প। জীবন ঘনিষ্ট গল্পে এমন ড্রামা সাস্পেন্স একটু কমই দেখা যায়।
দারুন চরিত্রের সাথে মানিয়ে অভিনয় করেছেন ঠাং পাগলার আরমান পারভেজ মুরাদ। সাথে নিজেকে ভেংগে নতুন রুপে জাত চিনিয়েছেন পিয়া জান্নাতুল। মিরাক্কেলের সজল এর কথা না বললেই নয়। চটকার চরিত্রে প্রাণবন্ত অভিনয় করেছে সে। অন্যদিকে পৃথীবালার চরিত্রে মৌসুমি হামিদ ভাল করেছে। তবে আরো ভাল আশা করছে দর্শক। শিমূল খান সুযোগ পেয়েছিলেন। বেশ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেও চরিত্রের গভীরে ঢুকে অভিনয় তার করা হয়নি। গতানুগতিক অভিনয়। হয়ত নেগেটিভ চরিত্র খোলস থেকে পুরো বেড় হতে পারেনি সে। কান্নার অভিব্যক্তিগুলোয় মনোযোগী হলে আরো ভাল করতে পারত ।
মোঘল সরকারের ভূমিকায় ডন হক তার মতই অভিনয় করেছে। হয়ত প্রস্তুতি আরো নিলে তিনি ভাল করতেন।
পরিচালক এইচ আর হাবিব নিজে একটি অভিনয় করেছেন। ভাল। চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন বেশ করেই।
এক কথায় গল্পের ছবি ছিটমহল। মেকিং ছোট খাট ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলেও গল্পের গাথুনী,সংলাপ এবং দৃশ্যায়ন বিশেষ করে ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিক অসাধারণ। সাথে তিনটি গানের কথা বেশ লেগেছে।
সব মিলিয়ে এতদিন পরিচালক এর ভাষায় গল্পের ছবি হলেও এখন দর্শকের কাছে গল্পের ছবি
ছিটমহল।